তিন দিন এক জায়গায় আটকা, বিস্কুট-পানি খেয়ে বেঁচে আছি
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
২৪-০৮-২০২৪ ০৬:২১:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:০২:০৬ অপরাহ্ন
চট্টগ্রামের সুন্দর আলী পেশায় লরিচালক। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরের উদ্দেশে রওনা দেন, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্লাবিত হলে আটকে যায় সুন্দর আলীর লরি। তিন দিন পর আজ শনিবার তিনি লরি নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের লেমুয়া ব্রিজ এলাকায় যানজটে আটকে আছেন।
আজ দুপুরের দিকে কয়েক দফার চেষ্টায় মুঠোফোনে সুন্দর আলীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো। তিনি বললেন, ‘তিন দিন ধরে এক জায়গায় আটকে আছি। আমি আর আমার সহকারী আছি। খাবার আর পানির কষ্ট। মোবাইলেও চার্জ দিতে পারছি না। একজনের মাধ্যমে অল্প চার্জের ব্যবস্থা করছি। দুই দিন আগে অল্প কিছু বিস্কুট কিনেছিলাম। বিস্কুট ও পানি খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি। শুধু সুন্দর আলী নন, বন্যা ও যানজটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েক শ চালক আটকে আছেন। যাত্রীবাহী অনেক বাসও সড়কে আটকে আছে। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ থেকে পানি নেমে গেলেও ফেনী অংশে পানি নামেনি। সেখানে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলো আটকে আছে।
হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে চার ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছিল।
তীব্র স্রোতও ছিল। ফেনীর ফাজিলপুর থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় লেনে যান চলাচল প্রায় বন্ধ আছে। আজ সকালে মিরসরাইয়ের সোনা পাহাড় বিশ্বরোড থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যানজট ছিল। মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ফেনী থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত সড়ক। এর মধ্যে ঢাকামুখী অধিকাংশ যানবাহন ফেনীর ফাজিলপুর থেকে মহিপাল পর্যন্ত আটকে আছে। সেখানে থাকা কয়েকজন ট্রাক ও লরিচালকের মুঠোফোনে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ চৌধুরী জানান, মহাসড়কের এ অংশে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তীব্র স্রোতের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। এখানে অন্তত চার ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
যান চলাচল কবে স্বাভাবিক হবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কুমিল্লা অংশে আটকে থাকা কয়েকজন চালকের মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। চালকদের বরাতে চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে গাড়ি একেবারে চলছে না। জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। যানজটের কারণে পণ্য পরিবহন থেমে গেছে। মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি এস এম লোকমান হোসাইন বলেন, ‘ত্রাণের গাড়িগুলো যাওয়ার জন্য মহাসড়কের এক পাশ খালি রাখা হয়েছে। ফেনীতে মহাসড়কে পানি উঠে গেছে। সেখানেই অধিকাংশ গাড়ি আটকে আছে। চট্টগ্রাম থেকে গতকাল শুক্রবার ত্রাণ নিয়ে ফেনীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন এ কে এম নবীউল হক। তবে মিরসরাই পর্যন্ত গিয়ে আটকে যান তিনি। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বারইয়ারহাট এলাকা পার করতে পারেননি। পরে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। নবীউল হক বলেন, ‘মিরসরাই থেকে তীব্র যানজট। তাই আর সামনে যেতে পারিনি। নবীউল হক চট্টগ্রাম আন্তজেলা মালামাল ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সহসভাপতি। গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায়। আজ সকালে তিনি বলেন, ‘শুধু পণ্যবাহী নয়, মহাসড়কে অন্যান্য যানবাহনও আটকে আছে। মিরসরাই থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। সামনের দিকে যাওয়া যাচ্ছে না।’
মহাসড়কে বন্যার পানি উঠে যাওয়া ও যানজটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাস বন্ধ রয়েছে। মালিক সমিতি বলেছে, ‘মহাসড়কে আটকে থাকা যানবাহনের চালকদের মুঠোফোনে চার্জ নেই। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাই এ মুহূর্তে মহাসড়কে কত যানবাহন আটকে আছে, সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার খবর পাওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। খুব বেশি যাত্রীবাহী বাস হয়তো মহাসড়কে আটকা নেই। তবে কিছু বাস ছেড়ে গিয়েছিল। চালকদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স